রাজনীতি

আ’লীগে বাদ পড়ার শঙ্কায় অনেক নেতা

Spread the love

শেরপুর ডেস্ক: আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনে প্রায় ৫ হাজার অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিত নেতার তালিকা হওয়ায় বেশ শঙ্কায় আছেন অনেক নেতা। কেন্দ্র থেকে শুরুকরে তৃণমূলের এসব নেতা নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। তালিকায় কারা আছেন, তাদের ভবিষ্যৎ কী, আগামী কমিটিতে থাকতে পারবেন কিনা, তাদের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা, প্রাথমিক সদস্যপদ থাকবে কিনা- এসব জানতে দলটির নীতিনির্ধারকদের কাছে ছুটছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।
আর যারা তালিকাভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন- তারা নিজেদের নাম বাদ দিতে চালাচ্ছেন নানা তৎপরতা। তবে তাদের এসব চেষ্টা পুরোপুরি নিষ্ফল হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা। তারা জানান, এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে হাইকমান্ড। এমনকি তালিকায় যাদের নাম এসেছে, তাদের কেউ প্রভাবশালী নেতা হলেও মা নেই।
নীতিনির্ধারকরা আরও জানান, তালিকাভুক্ত পাঁচ হাজার নেতার মধ্যে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন দেড় হাজার এবং বিতর্কিত দুই হাজার নেতা। এছাড়া সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিত নেতার সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। এসব নামের তালিকা এখন ৮ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের হাতে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিত নেতাদের তালিকা তৈরি করেছেন। তালিকাভুক্ত নেতারা নতুন কোনো কমিটিতে পদ পাবেন না। পাশাপাশি নিষিদ্ধ থাকছেন জাতীয় ও তৃণমূল কাউন্সিলে। চলতি মাস থেকে এসব পদপে কার্যকর হচ্ছে।
আরও জানা গেছে, যেসব বিষয় বিবেচনা করে অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- বিএনপি-জামায়াত-শিবির থেকে যারা এসেছেন, চিহ্নিত টেন্ডার, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যু, যাদের ভাবমূর্তির সংকট আছে, নেতিবাচক রাজনীতির জন্য যারা জনবিচ্ছিন্ন এবং খুন-ধর্ষণ সহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন সহ তৃণমূলের অনেক কমিটিতেই রয়েছেন অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতরা। শুধু তাই নয়, দলের অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কেন্দ্র থেকে শুরু করে সব স্তরের কমিটিতেও বিএনপি, জামায়াত ও ফ্রিডম পার্টি সহ বিভিন্ন দল থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা ঢুকেছেন মতাসীন দলে।
ঢাকা উত্তর ও দণি আওয়ামী লীগ সহ এর অঙ্গ-সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কমিটিও অনুপ্রবেশকারীতে ভরা। দল টানা প্রায় ১১ বছর মতায় থাকায় তুলনামূলক বেশি সুযোগ-সুবিধাভোগীও এ অনুপ্রবেশকারীরাই। দলের সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ- ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ সহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা কমিটিতে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান-নাতিরাও ঢুকে পড়েছে।

এেেত্র মোটা অঙ্কের অর্থের লেনদেন হয়েছে। পরবর্তীতে দলীয় পদ ব্যবহার করে টেন্ডার, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ বনে গেছেন এসব অনুপ্রবেশকারীরা। নিজস্ব বলয়ের মাধ্যমে প্রভাব-প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখতে দলের মন্ত্রী-এমপিরা এসব অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতদের স্থান দিয়েছেন, নৌকার বিরোধিতা করেছেন আবার অনেক স্থানে নৌকায় তুলে দিয়ে জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন।
গণভবন সূত্রে জানা গেছে, মূল দল এবং অঙ্গ-সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর অনেক স্থানেই অনুপ্রবেশকারীরা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠলে তাদের বিষয়ে দলীয়ভাবে এবং একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খোঁজ নেন খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই তালিকা তৈরি করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার রাতে টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, সংখ্যা তথ্যটা বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় যারাই রয়েছেন তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামী সম্মেলনে তালিকায় থাকা অনুপ্রবেশকারী, বিতর্কিতরা কেউই কমিটিতে স্থান পাবেন না। এটা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত হবে। সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের নাম প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় আছে। তালিকাভুক্তদের প্রাথমিক সদস্যপদ থাকবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটিতে থাকছে না, এটা নিশ্চিত। সদস্যপদের বিষয়টি পরে দেখা যাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button
Close