ঢাকার অর্ধেক মানুষ করোনায় আক্রান্ত
শেরপুর ডেস্ক : রাজধানীতে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে দেখা গেছে ৪৫ শতাংশ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও বেসরকারি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) যৌথভাবে এই গবেষণা করেছে। এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত জরিপ করে এ দুটি প্রতিষ্ঠান। এতে সহযোগিতা করে ইউএসএআইডি এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। জরিপে আক্রান্তদের ২৪ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি। তবে ঢাকার প্রায় অর্ধেক মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন সেটি বলতে নারাজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
সোমবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ও জিন রূপান্তর নিয়ে গবেষণার এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের বস্তির প্রায় তিন চতুর্থাংশ মানুষ ইতোমধ্যে সংক্রমিত হয়েছেন। করোনার কোন লক্ষণ ছিল না এমন ৪৫ শতাংশ নগরবাসী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ঢাকায় স্বল্প পরিসরে এই গবেষণা চালানো হয়েছে। সেখানে প্রায় ৬শ’ জনের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে এরমধ্যে ৪৫ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে। এই স্বল্প পরিসরে জরিপের ভিত্তিতে বলা যাবে না যে ঢাকার অর্ধেক মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। গত আগস্ট মাসে যে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে এরই অংশ এটি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মিডিয়া সেল সংবাদকে বলেছেন, গবেষণাতে রাজধানী ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টি ওয়ার্ডে এই জরিপ চলে। প্রতিটি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি মহল্লা বাছাই করে ১২০টি বাড়িতে এই জরিপ নেয়া হয়।
দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং এর জিন রূপান্তর নিয়ে করা এই গবেষণার ফলাফলে বলা হয় ঢাকার বস্তিগুলোতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪ শতাংশ মানুষ।
অনুষ্ঠানে অনলাইনে অংশগ্রহণ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমরা দ্রুত পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যার সুফল দেশের মানুষ পেয়েছে। অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ভালো করেছে, ভালো আছে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ১ থেকে ১০৯টি ল্যাব হয়েছে, সেন্ট্রাল অক্সিজেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ অন্যান্য সব কিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জানা গেছে, দেশে মহামারীর শুরু থেকেই ঢাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সারাদেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে দ্বিগুণ হারে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো শিথিল হওয়ায় পরিস্থিতি আরও বেশি অবনতির দিকে যাচ্ছে। রাজধানীতে আবার সংক্রমণ বাড়ছে। গত আগস্টে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৯ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল। এরমধ্যে আবার ৭৮ শতাংশই উপসর্গহীন ছিল। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) করা এক জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল জরিপে দেখা গেছে ৬শ’ জনের মধ্যে ৪৫ শতাংশ মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়েছেন।
রাজধানীর জীবনযাত্রা মহামারী শুরুর প্রায় আগের অবস্থায় চলে এসেছে। রাস্তায় মানুষের ঢল আর যানজট অনেকটা আগের মতো। খুব কম মানুষ মাস্ক পরে রাস্তায় বের হচ্ছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার বিষয়টি গুরুত্ব হারিয়েছে। কাঁচাবাজার শুধু নয়, অফিস ও ব্যাংক পাড়াতেও পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যাচ্ছে না। মানুষ অনেকটা বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে চলাফেরা যাতায়াত করছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে তেমন কোন সরকারি উদ্যোগ মানুষ দেখতে পাচ্ছে না, মানুষের সামনে কোন বিধিনিষেধ কার্যত নেই। তাই বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে সংক্রমণ থেমে নেই।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের কথা নিশ্চিত করে সরকার। এখন দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৮ জন, সংক্রমণের হার ১৮.২২ শতাংশ আর মৃত্যু হয়েছে মোট ৫৫৫৫ জনের।
দেশে নিশ্চিত আক্রান্ত বা ইতোমধ্যে যাদের সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে, তাদের এলাকাভিত্তিক হিসাব প্রকাশ করে আইইডিসিআর। যদিও সব এলাকাভিত্তিক হিসাব নেই। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর নমুনা পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে আক্রান্তের যে সংখ্যা দেয়, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি।
আইইডিসিআরের পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, রাজধানীতে জনঘনত্ব বেশি। অফিস-আদালত ঢাকায় বেশি। এখন স্বাস্থ্যবিধিও সবখানে মানা হচ্ছে না। রাজধানীতে বড় বড় হাসপাতাল থাকলেও কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা একেবারেই নেই। এটি সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। কিন্তু তাদের সেই সম্পদ, জনবল নেই। কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা গেলে বা আক্রান্তদের সবার নিয়মিত ফলোআপ করা গেলে মৃত্যু ও সংক্রমণ আরও কমানো যেতো। সুত্র: সংবাদ