ইতিহাস ও ঐতিহ্য

সত্য বলার পাঁচ পুরস্কার-আল হাদিস

Spread the love

শেরপুর ডেস্ক: আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে মুখস্থ করেছি, ‘যে কাজের ব্যাপারে মনে সন্দেহ হয়, সে কাজ ছেড়ে দিয়ে সন্দেহমুক্ত কাজ করো। কেননা সত্য প্রশান্তিকর এবং মিথ্যা দ্বিধাযুক্ত।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৮)
হাদিস বিশারদদের মতে, হাদিসটি দ্বিনের অন্যতম মূলনীতি। ইসলাম মানুষকে সংশয় ও সন্দেহের অন্ধকার পথ পরিহার করে বিশ্বাসের আলোয় আলোকিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাকওয়া বা খোদাভীতিরও দাবি এটাই। সন্দেহজনক বিষয় মানুষকে হারামের পথে পরিচালিত করে। অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। এই দুয়ের মধ্যে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয়। বেশির ভাগ মানুষ যা জানে না। অতঃপর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় থেকে বেঁচে থাকে, সে নিজের দ্বিন ও সম্মানকে ত্রুটিমুক্ত রাখে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক কাজে লিপ্ত হয় সে হারামে লিপ্ত হয় (ধাবিত হয়)। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২)
তাঁরা আরো বলেন, মানব প্রকৃতি সত্য দ্বারা পরিতৃপ্ত হয় এবং মিথ্যা মানুষের প্রকৃতিতে অস্থিরতা তৈরি করে। তার হৃদয়কে বিুব্ধ করে। এ ছাড়া সত্যবাদিতার আরো কিছু কল্যাণ কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
যেমন
এক. সত্য হৃদয়কে প্রশান্ত করে : সত্য মানব হৃদয়কে প্রশান্ত করে। ফলে সত্যবাদী সুখী ও তৃপ্ত হয়। যেমনটি আলোচ্য হাদিসে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সত্য (হৃদয়ের) প্রশান্তিকর।’
দুই. মুমিনকে মুনাফিক থেকে পৃথক করে : সত্য মুমিন ও মুনাফিকের ভেতর পার্থক্যকারী। সত্যবাদিতা মুমিনের বৈশিষ্ট্য আর মিথ্যা মুনাফিকের নিদর্শন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে, যখন আমানত রাখা হয়, তার খেয়ানত (বিশ্বাসভঙ্গ) করে।’ (আল জামিউ বাইনাস সাহিহাইন, হাদিস : ২৯২৫)
তিন. কিয়ামতের দিন সত্যবাদী উপকৃত হবে : কিয়ামতের দিন সত্যবাদিতা মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ সত্যবাদীদের সত্যবাদিতা তাদের উপকারে আসবে।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১১৯)
চার. সত্যবাদিতা পুণ্যের পথে পরিচালিত করে : সত্য মানুষকে নেকের পথে পরিচালিত করে আর মিথ্যা মানুষকে পাপের পথে পরিচালিত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই সত্য মানুষকে পুণ্যের পথনির্দেশ করে।’ (আল জামিউ বাইনাস সাহিহাইন, হাদিস : ২৮৭)
পাঁচ. সত্যের চর্চা মানুষকে ‘সিদ্দিকে’র মর্যাদা দেয় : মানুষ যখন সত্য বলায় অভ্যস্ত হয়, তখন আল্লাহ তাকে ‘সিদ্দিক’ (আল্লাহর নিকটতম ও নিষ্ঠাবান) বান্দা হিসেবে গণ্য করেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন সর্বদা সত্য বলে এবং সত্য বলার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে, শেষ পর্যায়ে তার নাম আল্লাহর কাছে ‘সিদ্দিক’ হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৮০৫)
সত্যবাদিতার সীমা
সত্যবাদিতা শুধু কথায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা মানুষের কথা, কাজ ও মনের ইচ্ছার সঙ্গেও সম্পৃক্ত। সুতরাং কোনো মানুষ সত্যবাদী হওয়ার অর্থ হলো, সত্য কথা বলা, কাজকর্মে ঈমানের প্রতিফলন ঘটানো এবং নিয়ত তথা সব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘সত্যবাদিতা নেককাজের ভিত্তি এবং তা নেককাজ একত্র করে। মিথ্যা গুনাহের ভিত্তি ও তার বিধানভুক্ত।’ (মাজালিসুল মুমিনিন : ১/১৫০)
সত্যবাদী মানুষের বৈশিষ্ট্য
শায়খ সোলায়মান বিন মুহাম্মদ আল-লুহাইমিদ সত্যবাদী মানুষের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। তা হলো
১. সত্যবাদী শান্ত ও নির্লিপ্ত হয়। অপরাধপ্রবণ মানুষের মতো তার ভেতর অস্থিরতা কাজ করে না।
২. তারা (সত্য বলার কারণে) পার্থিব স্বার্থ বিসর্জনের জন্য প্রস্তুত থাকে এবং পরকালে আল্লাহর সাাৎ ও প্রতিদানের প্রত্যাশা করে।
৩. সত্যবাদী অন্যের জন্য নিরাপদ ও উপকারী হয়। কেননা অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকায় তারা ষড়যন্ত্র, মানুষের তি ও পাপচিন্তা থেকে বিরত থাকে।
৪. মানুষের প্রশংসা বা তাদের দ্বারা তিগ্রন্ত হওয়ার আশঙ্কা করে না। এ ব্যাপারে তারা বিমুখ হয়। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘কোনো অন্তরে ইখলাস (নিষ্ঠা) ও প্রশংসা প্রাপ্তির প্রত্যাশা একত্র হতে পারে না, যেমন আগুন ও পানি একত্র হয় না।’ (আল ইখলাস : ১/৭)
৫. সত্যবাদী ব্যক্তি বাস্তবমুখী হয়। ফলে সে তার জ্ঞানের স্বল্পতা সম্পর্কে সতর্ক থাকে এবং অন্তরকে গাইরুল্লাহকে পরিশুদ্ধ রাখার চেষ্টা করে। (হাদিসের আলোয় জীবন গড়ি, পৃষ্ঠা. ৯৪)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button
Close