‘১৮ বছর পর মাকে খুঁজে পেল হাসি’
শেরপুর ডেস্ক: ১৮ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া হাসি আক্তার (২২) কে তার মা সহ অন্যান্য স্বজনদের খুঁজে পেয়েছে। শনিবার দুপুরে রাজবাড়ী প্রেস কাবে দৈনিক কালের কণ্ঠ শুভসংঘ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাসিকে তার নানি জাহানারা বেগম সহ স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সে সময় তাদের হাতে উপহার তুলে দেন, রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম ও পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান পিপিএম সহ আগত অতিথিরা।
হাসি গাইবান্ধা সরকারি শিশু পরিবার (বালক)-এর অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। হাসি’র মাত্র এক মাস আগে নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার চেঁওখালী গ্রামের আব্দুল জলিল প্রমাণিকের ছেলে ও বেসরকারি কম্পানিতে চাকরি করা যুবক রায়হান হাসান তুষারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে।
এদিকে, শনিবার বিকালে হাসি তার স্বামীকে নিয়ে যখন তার নানা বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের মল্লিকপাড়া গ্রামের নানা মৃত খলিল মিয়ার বাড়িতে পৌঁছান সে সময় এলাকার হাজারো মানুষ তাকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় করে। সন্ধ্যার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া গ্রাম থেকে সেখানে এসে পৌঁছান হাসি’র মা খাদিজা বেগম। সে সময় একে অপরের জড়িয়ে ধরে করেন, আনন্দের কান্না। যা দেখে উপস্থিতি অন্যান্যদেরও চোখে আসে জল।
জানা গেছে, পাঁচ বছর বয়সে হাসি তার দাদির সঙ্গে ট্রেন যোগে রাজশাহীতে থাকা বাবা হাসেম আলীর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। ট্রেনের মধ্যে সে ঘুমিয়ে যায় এবং ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার দাদি নেই। তার কান্না দেখে হৃদয়বান এক রেলওয়ে কর্মচারী হাসিকে রাজশাহীর সরকারি ছোটমনি নিবাসে রেখে আসেন। সেখান থেকে এক বছর পর তাকে নেয় হয় গাইবান্ধা সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) তে। সেখানে থেকেই এইচএসি পরীায় উত্তীর্ণ হন এবং গাইবান্ধা সরকাই শিশু পরিবার (বালক)-এর অফিস সহকারী হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। এক মাস পূর্বে তার বিয়ে হয় রায়হানের সঙ্গে। ১৫ দিন আগে হাসির স্বামী রায়হান দৈনিক কালের কণ্ঠের রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক কালের কণ্ঠ শুভসংঘ রাজবাড়ী জেলা শাখার সদস্যদের সহযোগিতায় সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের মল্লিকপাড়া গ্রামে থাকা হাসির নানা বাড়ি খুঁজে বের করতে সম হন।
হাসি আক্তার বলেন, আমি জীবনে এমন কোনো আনন্দ সংবাদ আগে কখনো পাইনি। আমি বেঁচে আছি এবং আমি আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলছি। আমার মা আমার জন্মদানকারী মা। তিনি আরো বলেন, তার দাদা বাড়ি ছিল রাজশাহীতে। তবে তার মা ও বাবা থাকতেন রাজবাড়ীর খানখানাপুরের নানা বাড়িতে। পাঁচ বছর বয়সে তিনি তার দাদা বাড়ি বেড়াতে আসার লে দাদির সঙ্গে খানখানাপুর রেলস্টেশন থেকে রাজশাহীগামী ট্রেনে ওঠেন। তবে ঘুম ভেঙ্গে দেখেন তার দাদি পাশে নেই। শুরু করেন কান্নাকাটি। এক পর্যায়ে কিছু হৃদয়বান মানুষ তাকে রাজশাহীর সরকারি ছোটমনি নিবাসে পৌঁছে দেন। সেখানে কয়েক বছর থাকার পর কর্তৃপ তাকে গাইবান্ধা সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) তে পাঠিয়ে দেয়। ওই শিশু পরিবারে তার কাটে ১৮ বছর। ওই শিশু পরিবারে থেকে তিনি এইচএসসি পাশও করেন। এক বছর আগে গাইবান্ধা সরকারি শিশু পরিবার (বালক) এ তিনি অফিস সহকারী হিসেবে যোগদান করেন।
তিনি আরো বলেন, গাইবান্ধা সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) তে থাকা অবস্থা প্রতিটি মেয়ের মা সহ আত্মীয়-স্বজনরা সকল সময় আসতো খোঁজ-খবর নিতো। অথচ তার খোঁজ নেওয়ার মতো কোনো মানুষ ছিল। ঈদসহ অন্যান্য উৎসবগুলোও তার কাটতো ভীষণ যন্ত্রণায়। তবে কাউকে তিনি ওই যন্ত্রণা বুঝতে দিতেন না, অনাথ অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে তিনি চেষ্টা করতেন আনন্দের জোয়ারে ভাসতে।
তাদের সঙ্গে আসা হাসির চাচা শ্বশুর ও নাটোরের সমাজ সেবা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আরিফ বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে তিনি হাসি’র মা সহ স্বজনদের হাতে তাকে তুলে দিতে পেরেছেন। এখন আর হাসি এতিম নয়। হাসির এখন সবাই আছে।