চলনবিলে মাছ ধরার বাউত উৎসব শুরু
শেরপুর ডেস্ক: চলনবিলের বাউত উৎসবচলনবিলে প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি থেকে সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার দুইদিন চলে মাছ ধরা। যা মূলত ইংরেজি ডিসেম্বর মাসের ৩ তারিখে শুরু হয়ে থাকে। চলে মাসব্যাপী। পলোসহ নানা সরঞ্জাম দিয়ে এই মাছ ধরার স্থানীয় নাম বাউত উৎসব। বাউত বলতে সাধারণত মাছ শিকারিদের বোঝানো হয়। এ উপলে চলনবিলের পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়ায় নানা জেলার মৎসপ্রেমীরা মিলিত হন।
সরেজমিন বিলরুহুলে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত পলো দিয়ে মাছ ধরার মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয়। শৌখিন মাছ শিকারিরা হাত পলো, পাউ পলো, নেট পলো ছাড়াও ডোরা জাল, খেয়া জাল, হাতখড়া, বাদাই জাল, ঘের জালসহ নানা উপকরণ নিয়ে নেমে পড়েন। কয়েকশ’ একর জমিজুড়েই বিল রহুলের সীমানা। বর্ষার পানি নেমে গেলেও কিছু পানি থেকে যায় নিচু জমিতে। আর এই পানিতে পাওয়া যায় দেশি প্রজাতির নানা মাছ। এরমধ্যে বোয়াল, গজার, শোল, রুই, কাতলা, চিতল, পুঁটি, খৈলসা, টেংড়া, পাবদা, শিং মাছ অন্যতম।
চলনবিলের বাউত উৎসবচলনবিল কেন্দ্রিক এ উৎসবে পাবনা সদরসহ চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, আটঘরিয়া, নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর এবং সিরাজগঞ্জের তাঁড়াশ এলাকার অধিবাসীরাই উৎসবে বেশি আসেন।
নাটোর থেকে আসা শৌখিন মাছ শিকারি আবু বকর বলেন, ‘মোবাইল ফোনে নানা জেলার বাউতদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই প্রতিবছর এই দিনে আমরা বিল রুহুলে মাছ শিকারে চলে আসি। কপালে মাছ জুটুক আর না জুটুক, এটা আমাদের একটা শখ।’
ঈশ্বরদী থেকে আসা ৫৫ বছর বয়সী ময়েজ উদ্দিন জানান, পলো দিয়ে মাছ ধরাটা তার নেশা। শত ব্যস্ততার মাঝেও বছরের এই দিনটিতে চলে আসেন রুহুল বিলে। তবে আগের মতো দেশি প্রজাতির মাছ নেই বলে দাবি করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘দিনটি মাছ ধরার একটি উৎসব। এর ব্যাপকতা দিন দিন বাড়ছে। এই বাউত উৎসব কৃষক, জেলে, ছাত্র, শিক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।’
চলনবিলের বাউত উৎসবচাটমোহর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘বাইত উৎসব গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। দেশের অন্যান্য এলাকায় এই উৎসব বিলুপ্তির পথে। তবে এই এলাকায় ঐতিহ্যটি এখনও টিকে আছে। তবে এই উৎসবের কারণে জীববৈচিত্র্য কিছুটা নষ্ট হচ্ছে। দেশি প্রজাতির ছোট মাছ, শেওলা জাতীয় মৎস্য খাদ্য এবং পানির উপকারি অণুজীব নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক থাকা দরকার।’
বাউত উৎসবে চলনবিলের সোকাদর, লাউগিলা, রুহুল বিল, মাঠবিল, বাওনজানি, সেওলার বিল, খিল বিল, নাড়লগাড়ি, হাতিগাড়া, দিকশির বিল, ডেঙ্গার বিল, খালিশাগাড়িবিল, বড়াল নদী, গুমানি নদী, চিকনাই, রত্মাই, করতোয়া নদীসহ বিভিন্ন বিলেই মূলত থাকে সবার আকর্ষণ।