বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ কাজ শিগগিরই শুরু হচ্ছে
শেরপুর ডেস্কঃ বহুল প্রতীক্ষিত বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ কাজ অবশেষে শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের বগুড়া, সিরাজগঞ্জ প্রান্তে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলছে রেলপথ নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া। এই রেলপথটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের মানুষের সহজ যাতায়াত নিশ্চিতসহ ঢাকার সাথে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর ১১২ কিলোমিটার দূরত্ব কমে আসবে।
একই সাথে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে অল্প খরচে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পপণ্যসহ কৃষিপণ্য সারাদেশে পরিবহন করা যাবে। এতে গতিশীল ও শক্তিশালী হবে এসব জেলার গ্রামীণ অর্থনীতি। জানা গেছে, ২০১১ সালে বগুড়ার এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি এখন বাস্তবে রুপ লাভ করছে।
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ কাজের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একাধিকবার বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের জন্য বিভিন্ন স্টেশনসহ জায়গা পরিদর্শন করেছেন। সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ায় জেলা প্রশাসক, দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সাথে বৈঠক এবং কথা বলেছেন রেলপথ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকতারা। সাধারণ মানুষের সুবিধা অসুবিধার সবকিছু আমলে নিয়ে এখন চূড়ান্তভাবে এর বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
ইতোমধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৯৪৪ একর জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ৭৫ কিলোমিটার এই রেলপথের রুট লাইন নির্মাণ করা হবে। তবে লুপ লাইনসহ মোট ৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এই রেলপথের ডাবল লাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে। তবে প্রথমে এটি ডুয়েল গেজ লাইন হবে। পরর্বতীতে এখানে ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল করবে।
এখনই ব্রিজগুলোতে ডাবল লাইন তৈরি করা হবে। এই রেলপথে মোট ৯টি স্টেশন তৈরি করা হবে। এগুলো হচ্ছে- মনসুর আলী, রায়পুরের পাশে একটি স্টেশন, নলকা কৃঞ্চদিয়া, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ, ছোনকা, শেরপুর, আড়িয়া বাজার, রাণিরহাট। মনসুর আলী স্টেশনে জংশনসহ মোট ৩টি জংশন তৈরি হবে। বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত আরও ৩ কিলোমিটার রেলপথ তৈরি করায় ট্রেনগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু পার হয়ে সারাদেশের সাথে চলাচল করতে পারে। এসব স্টেশনের বাইরে বগুড়ার কাহালুর সাথে সংযোগ স্থাপন হবে রেলপথের।
একই সাথে সান্তাহার থেকে উত্তরের ট্রেনগুলো এ পথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু হয়ে চলাচলের সুযোগ পাবে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ হলে উত্তরের জেলাগুলোর সঙ্গে ঢাকার প্রায় ১১২ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বগুড়া থেকে ট্রেনে সিরাজগঞ্জ যেতে সান্তাহার জংশন, নাটোর, পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। নতুন রেলপথ নির্মাণ হলে দূরত্ব কমে হবে মাত্র ৭২ কিলোমিটার। বর্তমানে সান্তাহার জংশন, নাটোর, ঈশ্বরদী ও উল্লাপাড়া হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছতে হয়।
তিন জেলার পথ ঘুরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। আর প্রায় ৪০৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৯ ঘণ্টা। অপরদিকে সড়কপথে ২১৬ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাসে ঢাকা যেতে সময় লাগে ৫-৬ ঘণ্টা। বগুড়া থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন সার্ভিস চালু হলে উত্তরের জেলাগুলোতে ট্রেনযাত্রীদের প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। একই সাথে বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ভারি, মাঝারি, ক্ষুদ্র শিল্পপণ্যসহ সব ধরনের কৃষিপণ্য ট্রেনে সারাদেশে কম খরচে পরিবহন করা যাবে।
এতে ব্যবসায়ী, কৃষকসহ সব শ্রেণীর মানুষ লাভবান হবে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু কাজ অর্ধেকের বেশি সমাপ্ত হয়েছে। এই সেতু চালু হলে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি রফতানি পণ্য কম খরচে ট্রেনযোগে পরিবহনেরও সুযোগ তৈরি হবে। এতে সবাই লাভবান হবে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে থেকে মানুষ সহজে ঢাকাসহ সারাদেশে কম খরচে নিরাপদে দ্রুত যাতায়াত করতে পারবে।
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হৃদয় জানান, এই রেলপথ নির্মাণ বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটা আমাদের এলাকাসহ উত্তরাঞ্চলের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিবে। বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে। এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান, চালসহ সব ধরনের কৃষিপণ্য সারাদেশে বাজারজাত করতে পারবে। একই সাথে মানুষের সহজ যাতায়াত নিশ্চিত হবে। সরকারের সুষম উন্নয়নের সুফল পাবে প্রান্তিক এলাকার সকল মানুষ।
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক মনিরুল ইসলাম ফিরোজী জানান, ইতোমধ্যে এই রেলপথ নির্মাণ কাজের ভূমি অধিগ্রহণ কাজের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সাথে আমরা পৃথক বৈঠক করেছি। অধীগ্রহণের জন্য প্রাথমিকভাবে ৯৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দুই প্রান্তে শিগগিরই এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। চলতি বছরেই আমরা প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার ও ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) এর যৌথ অর্থায়নে এই রেলপথ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৬ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এই রেলপথ নির্মাণে প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। তবে এ ব্যয় অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলা অবস্থায় আরও বাড়তে পারে।