১৪ ডিসেম্বর বগুড়ার শেরপুর পাক হানাদার মুক্ত দিবস
শহর প্রতিনিধি: লাল সবুজের পতাকা গড়া সোনার বাংলাদেশ। এ পতাকা একদিনেই আসেনি যা ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও আড়াই ল মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ১৪ ডিসেম্বর বগুড়ার শেরপুর হানাদার মুক্ত হয় । পাকহানাদার বাহিনীর হাত থেকে শেরপুর কে মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা এই দিনে শেরপুরে নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয়।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকেই শেরপুরে চলে তরুন ছাত্র সমাজের মধ্যে দেশ স্বাধীন করার দৃঢ় প্রত্যয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি, গঠন হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক নির্বাচিত হন তৎকালিন শেরপুর ডিগ্রী কলেজ ছাত্র সংসদের জি,এস বর্তমান পৌর মেয়র আলহাজ্ব আব্দুস সাত্তার । ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে মুক্তি বাহিনী। মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত হন ন্যাপ নেতা সিদ্দিক হোসেন । শেরপুর ডি,জে হাইস্কুল চত্বরে চলে কাঠের রাইফেল দিয়ে ট্রেনিং পরে শেরপুর থানা থেকে ১৪টি রাইফেল দেয়া হয়। ট্রেনিং দেন থানার তৎকালিন হাবিলদার আব্দুল হালিম। তাকে সহযোগিতা করেন থানার দারোগা ওয়াজেদ মিয়া। ২৪ এপ্রিল শেরপুরে পাকবাহিনী প্রবেশ করে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় গাছ কেটে ব্যারিকেড দেওয়ার চেষ্টা চালায় এবং সামান্য অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। কিন্তু পাক বাহিনীর নিকট টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে। এরপর মুক্তিয্দ্ধোরা বিচ্ছিন্ন ভাবে দেশের অভ্যন্তরে এবং ভারতে ট্রেনিং নিয়ে দেশে ফিরে আসতে শুরু করে।
১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারে শেরপুর থানায় ঐ সময় দুই জন কনস্টেবল ও একজন দারোগা আছে। পাক বাহিনী তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে ঐদিনই বিকেলে শেরপুর থেকে পলায়ন করে এবং রাজাকাররা আশ্রয় নেয় বিহারী অধ্যুষিত ঘোলাগাড়ী গ্রামে। ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৯ টায় সারিয়াকান্দী থেকে বাচ্চুর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা শেরপুর থানা দখল করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় মিত্র বাহিনী বগুড়া থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে শেরপুর বাসস্ট্যান্ডে ১৪ ডিসেম্বর বেলা ১১ টায় মুক্তিযোদ্ধাদের এ্যাম্বুসে পরে যায়। পরে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলে মিত্র বাহিনী ঢাকা অভিমুখে রওনা দেয়। এর পর মুক্তিযোদ্ধারা ঘোলাগাড়ী আক্রমন করে রাজাকার মুক্ত করে। এ সময় রাজাকার আলী আকবর, বুলু আক্তার, দিল মাহমুদ মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে মারা যায় এবং কিছু রাজাকার আত্মসমর্পন করে। ফলে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ শেরপুর হানাদার মুক্ত হয়। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর পার্কের মাঠে (বর্তমানে টাউনকাব পাবলিক লাইব্রেরী মহিলা অর্নাস কলেজ) তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক এমপি মরহুম আমান উল্লাহ খান মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে হাজারও মানষের উপস্থিতিতে স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ দিবসটি পালন উপলে শেরপুর প্রেসকাব সহ বিভিন্ন সংগঠন শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভা সহ বিভিন্ন কর্মসুচি গ্রহন করেছে।