সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘বিজয়ের সেই মুহূর্ত’
শেরপুর ডেস্ক: রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা চত্বরে পাতা একটি টেবিল, সঙ্গে দুটি চেয়ার। ধীর পদেেপ একটি চেয়ারে এসে বসলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। অন্যদিকে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে অপর চেয়ারে বসলেন ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিত্রবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। তার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি এবং ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডাররা।
ঘড়িতে তখন বিকেল ৪টা ৩১ মিনিট। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ দলিলে সই করলেন নিয়াজি। একই দলিলে সই করলেন মিত্রবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল অরোরা। এরপর বাঁশি বাজাতে বাজাতে পাকিস্তানি সেনারা এলাকা ছেড়ে চলে যায় মার্চ করতে করতে। তখন চারদিক থেকে আসছে মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি।
বিজয়ের ৪৮তম বার্ষিকীতে সোমবার ঠিক এভাবেই বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাহেন্দ্রণটিকে প্রতীকী মঞ্চায়নে তুলে ধরে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ‘৭১। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘শিখা চিরন্তন’ বেদি সংলগ্ন স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজিত এই প্রতীকী আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে সাী তখন বর্তমান প্রজন্মের হাজারো সন্তান, যাদের সঙ্গে আরও ছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা সেইসব বীর মুক্তিযোদ্ধা। ছয় মিনিটের প্রতীকী এই আত্মসমর্পণ মঞ্চস্থ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য পরিষদের সদস্যরা। পুরো অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করে।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও সংগঠনের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) কেএম সফিউল্লাহ বীরউত্তম। সংগঠনের সহসভাপতি নাট্যব্যক্তিত্ব ম. হামিদের সঞ্চালনায় ‘আত্মসমর্পণ’ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে দেশাত্মবোধক নাচ ও গান পরিবেশন করেন সংগঠনের তরুণ সদস্যরা।
অনুষ্ঠানে ৪৮ বছর আগে পাকিস্তানিদের আত্মসমপর্ণের সেই দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে কেএম সফিউল্লাহ বলেন, “মস্তক অবনত করে লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি যখন আত্মসমর্পণ দলিলে স্বার করলেন, তখন দেখা গেল তিনি পুরো নাম লেখেননি। তাকে পুরো নাম লেখার জন্য দলিলটি ফেরত দেওয়া হয়। এরপর নিয়াজি পুরো নাম লেখেন। সঙ্গে সঙ্গে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এ সময় ুব্ধ অনেকে ছোট ছোট পাথর নিপে করলেও নিয়াজিকে আমরা নিরাপদে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছেড়ে যেতে সহায়তা করি।”
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের আহ্বানে সোমবার বিকেল থেকেই হাজারো মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠানস্থলে সমবেত হয়। বিকেল ৪টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দৃশ্য মঞ্চস্থ করা ছাড়াও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্বে নৃত্য-সংগীত ও দেশবন্দনার আকর্ষণীয় পরিবেশনায় ছিল কয়েকটি সংগঠনের শিল্পীরা। আত্মসমর্পণের দৃশ্য মঞ্চস্থ করার পর মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সেনাপতি ও মুক্তিযোদ্ধাদের হাত থেকে নতুন প্রজন্মের হাতে জাতীয় পতাকা হস্তান্তর করা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন কেএম সফিউল্লাহ, ম. হামিদ, হারুন হাবীব, আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী, নুরুল আলম, এমএসএ মনসুর আহমেদ, বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, ডা. এম এ সালাম খান, মীর আছালত, লায়লা হাসান, আবুল হাছান ভূঁইয়া, শাজাহান দেওয়ান, এসএন আমিরুল ইসলাম, আবদুর রহিম, নাজমুল হক দুলাল প্রমুখ। এর আগে সকালে সংগঠনের নেতারা সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।