দেশের খবর

আশা জাগাচ্ছে রেমিট্যান্স

Spread the love

শেরপুর ডেস্ক: অর্থনীতির অধিকাংশ সূচক নেতিবাচক হলেও সদ্য শেষ হওয়া বছরজুড়ে আশাপ্রদ ছিল শুধু রেমিট্যান্স প্রবাহ। গত বছরের মাঝামাঝি বৈধপথে রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। ওই প্রণোদনা দেওয়ার পর থেকে প্রতিমাসেই বাড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। ২০১৯ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১ হাজার ৮৩৪ কোটি ডলার ( ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা) রেমিট্যান্স পাাঠিয়েছেন দেশে। একক বছরে এটি সর্বোচ্চ পরিমাণ। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির হারও অনেক বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রবাসীরা ১৬৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যা ছিল ১২০ কোটি ডলার। এ হিসাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৪০ শতাংশ। ২০১৮ সালে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৮ শতাংশ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে দুই বছর রেমিট্যান্স প্রবাহ কম ছিল। ২০১৫ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়ে হয় ১ হাজার ৫২৭ কোটি ডলার। কিন্তু ২০১৬ সালে কমে যায় প্রায় ১১ শতাংশ। ওই বছর অবৈধপথে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বৈধপথে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার। পরের বছর আরও কমে হয় ১ হাজার ৩৫২ কোটি ডলার। ২০১৮ সালে হুন্ডি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ায় বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ।
বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। গত অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হয়। গত ছয় মাসে প্রণোদনা হিসেবে ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, নগদ প্রণোদনা দেওয়ার পর থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক বাড়ছে। বছর শেষে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। আশা করছি, নতুন বছরে এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের অর্থনীতি অনেক চাপের মধ্যে রয়েছে। একমাত্র রেমিট্যান্স ছাড়া অর্থনীতির অন্য সব সূচকের অবস্থা খারাপ। রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। রাজস্ব আদায় কমছে। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। আমদানিও কমছে। বিনিয়োগে খরা কাটছে না। ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পাহাড়। শেয়ারবাজারে তো মন্দা লেগেই আছে। এ কারণে বলা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সই এখন সচল রেখেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা।
এদিকে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও নেতিবাচক ধারায় রয়েছে রপ্তানি আয়। শুধু নভেম্বরেই রপ্তানি আয় কমেছে ১১ শতাংশ। সব মিলিয়ে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রপ্তানি আয় হয়েছে ১ হাজার ৫৭৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। কমেছে আমদানি ব্যয়ও। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে খুব বেশি চাপ পড়েনি। রপ্তানি আয় নেতিবাচক হওয়া সত্ত্বেও রেমিট্যান্স প্রবাহ সন্তোষজনক থাকা এবং আমদানি ব্যয় অনেক কম হওয়ায় রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রয়েছে।
আমদানি ব্যয় কম হওয়ায় ব্যাংকগুলো আগের মতো ডলার কেনেনি। গত ছয় মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলো প্রায় ৪১ কোটি ডলার কিনেছে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় অনেক কমেছে। এশিয়ান কিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল অনেক কমে গেছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর এ দুই মাসে বাংলাদেশের আকুর বিল এসেছে ৯৭ কোটি ডলার। এর আগের দুই মাসে যা ছিল ৯৮ কোটি ডলার। জুলাই-আগস্ট সময়ে আকুর বিল ছিল ১০৩ কোটি ডলার। সুত্র-আমাদের সময়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button
Close