যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন আলোচনার প্রস্তাব, ইরানের না
শেরপুর ডেস্ক: ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে হামলার পর ইরানের সঙ্গে কোনো শর্ত ছাড়াই আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান।
জাতিসংঘে দেওয়া এক চিঠিতে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে ইরানের সঙ্গে কোনো শর্ত ছাড়াই আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছেন তারা। বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত তেহরানের রাষ্ট্রদূত মজিদ তখত রাভানচি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করে এটিকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অবিশ্বাস্য বলেও উল্লেখ করেন।
বৃহস্পতিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহযোগিতার জন্য আহ্বান করেছেন এটা অবিশ্বাস্য।
ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে ইরান প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সোলাইমানিকে হত্যার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেছেন, তিন জানুয়ারি ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ধারাবাহিক উত্তেজনা ও শত্রুতার সূচনা করেছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া ওই চিঠিতে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেলি ক্র্যাফট বলেছেন, ইরানের দ্বারা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা যাতে হুমকির মুখে না পড়ে এবং উত্তেজনা যাতে বৃদ্ধি না পায় সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে। ওই চিঠিতে কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার যুক্তি হিসেবে নিজেদের রক্ষা করার জন্যই এ কাজ করা হয়েছে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
সোলাইমানি হত্যাকাণ্ড সঠিক পদক্ষেপ ছিল বলে উল্লেখ করা হয় ওই চিঠিতে। মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সৈন্য এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজন অনুযায়ী অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেবে বলেও জানানো হয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ সনদের ৫১ ধারা উল্লেখ করে ইরানও চিঠির মাধ্যমে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে।
কোনো রাষ্ট্র যদি নিজেদের রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেয় তাহলে সেটি দ্রুত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করতে হবে বলে জাতিসংঘ সনদের ৫১ ধারায় বলা হয়েছে। জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত মাজিদ তখত রাভানচি এক চিঠিতে জানিয়েছেন, ইরান কোনো যুদ্ধ কিংবা উত্তেজনা বাড়াতে চায় না। প্রসঙ্গত ইরাকে দুটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে ৮০ মার্কিন সেনা নিহত ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সামরিক সরঞ্জামের। ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলের আইন আল আসাদ ও কুর্দিস্তানের ইরবিল ঘাঁটিতে ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে দাবি করা হয়- মঙ্গলবার শেষরাতে হামলার মাধ্যমে কাসেম সোলাইমানি হত্যার জবাব দেয়া হয়েছে। তবে এরপর ইরান আর যুদ্ধ চায় না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যদি হামলা করে তবে পাল্টা জবাব দেবে। সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়ে এর জবাব দেবে ইরান। মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন সেনাদের বিতাড়িত করা হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।
গতকাল থেকে দুই পক্ষ থেকেই কিছুটা নমনীয়তার ইঙ্গিত মিলেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা বাদ দেয় এবং সন্ত্রাসের পথ ত্যাগ করে, তাহলে শান্তি স্থাপনেও তিনি প্রস্তুত। ইরান যে নতুন কোনো হামলা চালানোর শঙ্কা নাকচ করেছে তাকে ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘তারা যে ক্ষান্ত দিয়েছে সেটা সবার জন্যই মঙ্গলজনক।’ ট্রাম্প বলেন, আমাদের সব সেনা নিরাপদে আছেন। তবে আমাদের সামরিক ঘাঁটির সামান্য ক্ষতি হয়েছে। আমাদের সেনারা যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, ‘ইরান থেমে গেছে; যেটা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ও বিশ্বের জন্য ভালো।’