বিদেশের খবর

যুক্তরাষ্ট ্রবিরোধী বিক্ষোভে কাঁপছে বাগদাদ

Spread the love

শেরপুর ডেস্ক: ইরাকের রাজধানী বাগদাদে স্মরণকালের বৃহত্তম মার্কিনবিরোধী গণবিক্ষোভ হয়েছে। কয়েক দশকের মধ্যে এত বড় বিক্ষোভ ইরাকে আর দেখা যায়নি। মার্কিনবিরোধী বিক্ষোভের স্লোগানে বারবার কেঁপে ওঠে বাগদাদ। এতে বাগদাদের অধিবাসীরা ছাড়াও বিভিন্ন প্রদেশের শিয়া, সুন্নি, কুর্দি ও আরব গোত্রগুলো অংশ নেন। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
ইরাকের রাজধানী বাগদাদের তাহরির স্কোয়ারে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী গণবিক্ষোভ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুক্তাদা আল-সদরের ডাকা ‘মিলিয়ন-ম্যান মার্চ’ নামে এ গণবিক্ষোভে গোটা বাগদাদ কেঁপে ওঠে।
কয়েক দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী এত বড় বিক্ষোভ আর দেখা যায়নি। তাহরির স্কোয়ার ছাড়াও মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভকারীরা সমবেত হয়।
‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘ইসরাইল ধ্বংস হোক’, ‘ইরাক থেকে এখনই বের হও মার্কিন সেনা’ বলে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেন। ‘ইরাক হলো নবী-রাসুলদের দেশ’ ও ‘ইরাক থেকে বের হও আমেরিকান সেনারা’ লেখা ব্যানার চোখে পড়ে।
বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগের হাতে রয়েছে ‘আল্লাহু আকবর’ (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) খচিত ইরাকের জাতীয় পতাকা। গণবিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন দেশটির প্রধান প্রধান গোত্রপ্রধান এবং এতে সমর্থন দিয়েছে ইরাকের শিয়া ও সুন্নি ধর্মীয় নেতারাসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।
এদিকে এ গণবিক্ষোভকে বাধাগ্রস্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে সিরিয়া থেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অনেক কর্মী ও সদস্যকে গোপনে ইরাকে আনা হয়েছে বলে খবর দিয়েছে। ইরাকের গণভিত্তিক ও মার্কিনবিরোধী সরকার গঠন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে দেশটিতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধানোর চেষ্টা করে আসছে মার্কিন সরকার।
বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে সম্প্রতি মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের জেনারেল কাসেম সোলেমানি এবং ইরাকের পপুলার মবিলাইজেশন ইউনিটের (পিএমইউ) উপপ্রধান আবু মুহানদিস আল মাহদি শহীদ হওয়ার পর মার্কিনবিরোধী শান্তিপূর্ণ গণবিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাগদাদের বিক্ষোভে অংশ নেয়া ইরাকিদের সংখ্যা কয়েক লাখ। মার্কিন সরকার ও তার আঞ্চলিক লেজুড়দের জন্য এটি বড় ধরনের রাজনৈতিক পরাজয় ও মার্কিনিদের প্রতি ইরাকিদের পদাঘাতের সমতুল্য। এতে ইরাকের জাতীয় সংহতি ও ঐক্য জোরদার করবে এবং এ অঞ্চলে মার্কিন-ইসরাইলি ষড়যন্ত্র বানচাল করবে।
এ গণবিক্ষোভের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সরকারের হস্তক্ষেপ, শোষণমূলক ও ষড়যন্ত্রকামী নীতির প্রতি জনগণের প্রবল ঘৃণা তুলে ধরা হচ্ছে। বাগদাদের গণবিক্ষোভকে মার্কিন সরকারের জন্য দুঃস্বপ্ন বলে মার্কিন টেলিভিশন সিএনএন উল্লেখ করেছে।
শুক্রবার দুপুরের আগ থেকেই বাগদাদের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্ষোভে যোগ দেন ইরাকিরা। রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন প্রদেশ থেকেও এ কর্মসূচিতে যোগ দিতে থাকেন শিয়া, সুন্নি, কুর্দি ও আরব-নির্বিশেষে সব গোত্র-সম্প্রদায়ের ইরাকিরা। দুপুর নাগাদ বাগদাদে জড়ো হয় লাখ লাখ মানুষ।
ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে মুক্তাদা আল-সদর সম্প্রতি এ বিক্ষোভ ডেকেছেন। ইরাকের বাগদাদে মার্কিনিদের ড্রোন হামলায় ইরানের সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল কাসেম সোলেমানির নিহতের জেরে মধ্যপ্রাচ্যে এখন চরম অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।
মার্কিন সেনাদের মধ্যপ্রাচ্য থেকে তাড়ানোর জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ইরান-ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশ। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিনবিরোধী বিক্ষোভে নেমেছেন ইরাকের জনগণ।
ইরাকের এ শান্তিপূর্ণ মহাবিক্ষোভকে ১৯২০ সালে অনুষ্ঠিত ইরাকের ইসলামী বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। সে সময় ইরাক ও ইরানের প্রখ্যাত শিয়া ও সুন্নি আলেমদের আহ্বানে ব্রিটিশ দখলদারির বিরুদ্ধে ইরাকের সর্বত্র গণপ্রতিরোধ শুরু হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button
Close