‘মুজিব গ্রাফিক নভেল’ প্রজন্মের সেতুবন্ধ
শেরপুর ডেস্ক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে ১০ খণ্ডের ‘মুজিব গ্রাফিক নভেল’-এর ছয়টি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধান ও পরিবর্তন-পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) ‘মুজিব’ প্রকাশ করেছে।
মুজিব শতবর্ষ লক্ষ্য রেখে এ বছরের মধ্যেই বাকি খণ্ডগুলোর কাজ সম্পন্ন হবে। সব খণ্ড একত্রে একটি ভলিউমে প্রকাশ করা হবে। অনেক ভাষায়ও এগুলো অনূদিত হবে। এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সেতুবন্ধের মতো কাজ করবে।
মহাত্মা গান্ধী, আব্রাহাম লিংকন, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো বিশ্ববরেণ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে জীবনীভিত্তিক সচিত্র উপন্যাস বা কমিক নভেল সিরিজ প্রকাশিত হয়েছে। জাতির পিতার জীবনী, কৃতিত্ব ও অবদান নিয়ে তথ্যবহুল ও পরিচিতিমূলক প্রকাশনা হল ‘মুজিব গ্রাফিক নভেল’।
এ সিরিজের সহ-প্রকাশক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, ছোটবেলায় আমরা অনেক বিখ্যাত মনীষীর সচিত্র বই পড়েছি। ছোটদের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে পৌঁছে দেয়ার জন্য আমরা এ রকম সচিত্র বই প্রকাশ করেছি। তিনি বলেন, ‘মুজিব গ্রাফিক নভেল’ প্রকাশের বিষয়টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের মাথা থেকে এসেছে। তিনি আরও বলেন, এর প্রকাশনা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কার্টুন আঁকা ঠিক হচ্ছে না বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং আমাদের পক্ষে ছিলেন। সরাসরি তিনি সম্পাদনায় অংশ নিয়েছেন। এ কারণে এত বড় কাজ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে।
এ বিষয়ে সিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন সামস বলেন, জনপ্রিয় কমিক সিরিজের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সেতুবন্ধের মতো কাজ করবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ জাতীয় কাজ হয়ে থাকে।
জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ভিত্তি করে কাজটি করা অনেক চ্যালেঞ্জের ছিল। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সমন্বয় করে ও নিয়মিত গাইডলাইন নিয়ে কাজটি করেছেন। সেই সময়ের ঘটনাগুলো বাছাই, ঐতিহাসিক চরিত্রগুলো সঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলা ও আঞ্চলিক ভাষার সঠিক উচ্চারণ (একসেন্ট) রেখে কাজগুলো করতে শত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি মতামত ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
সাব্বির বিন সামস বলেন, বাংলা, ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় ‘মুজিব গ্রাফিক নভেল’ সিরিজগুলো প্রকাশের কাজ চলছে। মুজিব শতবর্ষ লক্ষ্য রেখে এ বছরের মধ্যেই বাকি খণ্ডগুলোর কাজ সম্পন্ন হবে। সব খণ্ড একত্রে একটি ভলিউমে প্রকাশিত হবে। অনেক ভাষায়ও এগুলো অনূদিত হবে।
‘মুজিব গ্রাফিক নভেল’-এ কাজ করার বিষয়ে সিআরআইয়ের ক্রিয়েটিভ এডিটর ও সিরিজের এডিটর শিবু কুমার শীল বলেন, এ নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে গবেষণা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও গ্রাফিক নভেলের প্রকাশক রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও সহ-প্রকাশক জ্বালানিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর আগ্রহে সিআরআইয়ের দুইজন ট্রাস্টি ২০১৫ সাল থেকে কাজটি পুরোদমে শুরু করি।
গ্রাফিক নভেল বলতে আমাদের দেশের পাঠকরা মনে করেন- ‘কৌতুক ও ব্যঙ্গচিত্র’। অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে ঘটনা ও চরিত্র বাছাই এবং রাজনৈতিক জটিলতা কাটিয়ে কোটি মানুষের প্রিয় ও ভালোবাসার ব্যক্তিত্বকে সহজ করে উপস্থাপন করা খুবই চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে। নিয়মিত পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে দিয়েছেন তিনি। যেমন দুর্ভিক্ষের একটি চিত্রে দেখানো হচ্ছিল- পথে ঘাটে মানুষ মরে পড়ে আছে। কিন্তু ভুলক্রমে লাশগুলো স্বাস্থ্যবান দেখানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী সেখানে মার্ক করে দিয়েছেন- অভুক্ত মানুষের স্বাস্থ্য এমন হয় না!
গ্রাফিক নভেলের শিল্পী রাশেদ ইমাম তন্ময় বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো এমন একজন ব্যক্তির চরিত্র চিত্রণের চ্যালেঞ্জ ছিল। কমিক সিরিজ মানে রসিকতা বা কৌতুকের জগৎ, সেখানে পাঁচ বছরে ‘মুজিব’ সিরিজ দিয়ে সেই ধারণাকে ভাঙা সম্ভব হয়েছে। আরও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, বঙ্গবন্ধুকে মানুষ কীভাবে দেখে, সেইভাব ফুটিয়ে তোলা। আমি কীভাবে দেখি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এমনকি তরুণ বয়সের মুজিবকে তো সবাই দেখেননি।
তিনি বলেন, জাতীয় জাদুঘরে ‘মুজিব’ সিরিজের প্রকাশনা উৎসবে একজন পাঠক তার কাছে জানতে চান- ‘তরুণ বয়সের ছবিতে বঙ্গবন্ধুর মুখে যে তিলটা ছিল সেটা কোথায়’। তখন আমিও লক্ষ করি এবং সংশোধন করি। এভাবে ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে চরিত্র চিত্রায়ণ করলেও সব বয়সের পাঠকই সিরিজটি পড়ে অনেক কিছু জানতে ও বুঝতে পারবেন।
‘মুজিব’ সিরিজের ছয়টি খণ্ড বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে। বইটি অনলাইন ‘রকমারি’ ও মিনাবাজারের আউটলেট, চর্চার শোরুমসহ কয়েকটি স্থানে পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি খণ্ডের দাম ১৫০ টাকা ধরা হয়েছে। মুজিব শতবর্ষ উদযাপনের কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে ছবিগুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে। সুত্র:যুগান্তর