জনগণ হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে: আওয়ামী লীগ
শেরপুর ডেস্ক: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির ডাকা হরতাল জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে বিএনপিকে নেতিবাচক রাজনীতি পরিহার করার আহ্বানও জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
রোববার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটি এমন দাবি করে। এতে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জনগণের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপির হরতাল জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এরপরও তাদের লজ্জা-শরম না হলে এবং লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে যদি তারা নেতিবাচক রাজনীতি করে, তাহলে জনগণ থেকে তারা (বিএনপি) আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। প্রত্যাখ্যাত হয়ে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটু দেখতে চেয়েছি মাঠে না থেকে যে, জনগণ কী করে। দেখলাম জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, হরতাল কালচার বাংলার জনগণ বর্জন করেছে। রাস্তাঘাটে যানবাহন সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। এর মাধ্যমে প্রমাণ হল বিএনপি যে ভুলের রাজনীতি করে, জনগণ সেই রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এ ভুলের রাজনীতির কারণেই মানুষ ভোটকেন্দ্রে আসার প্রবণতা কমিয়ে দিয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের আগেই প্রত্যাখ্যান করে হরতাল ডাকায় বিএনপির সমালোচনা করে নানক বলেন, এর মধ্য দিয়ে আবারও বিএনপির চিরাচরিত চরিত্র ফুটে উঠেছে।
তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে বিএনপি থাকায় আমরা ধন্যবাদ জানিয়েছি। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরও বিএনপি ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে হরতাল ডাকায় দেশবাসী হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছে।
নানক আরও বলেন, নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচনকালে বিএনপির সন্ত্রাসী চরিত্র নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক থাকায় তারা কোনো সহিংস ঘটনা ঘটাতে পারেনি।
হরতাল আহ্বানের মাধ্যমে অগ্নি-সন্ত্রাসের মতাদর্শে বিশ্বাসী বিএনপি সহিংসতার পথে পা বাড়ালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে বলেও হুশিয়ার করেন তিনি। নির্বাচনে কম ভোটার উপস্থিতি নিয়েও তিনি কথা বলেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর কারণ বিএনপির নির্বাচনবিরোধী চরিত্র। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের শুরু থেকে বিএনপি নেতা ও তাদের প্রার্থীরা ভোটারদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার হয় এমন ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।
বিএনপির আচরণ দেখে মনে হয়েছে জয়ের জন্য নয়, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং জনগণের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের জন্যই অংশগ্রহণ করেছে। ইভিএম সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে ভবিষ্যতে আরও বেশি প্রচার-প্রচারণা চালানো প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
নানক আরও বলেন, একই সঙ্গে ভবিষ্যতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্তটিও পুনর্বিবেচনা করা যায় কি না, সে বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ঢালাওভাবে অভিযোগ করছে দাবি করে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তাহলে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন এত ভোট পেলেন কীভাবে? তিনি বলেন, ১১নং ওয়ার্ড থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ছোট ভাই কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এ রকম আরও উদাহরণ আছে।
এমনকি তাবিথ আউয়াল কয়েকটি কেন্দ্রে আতিকুলের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন! বিজয় মিছিল বা উৎসব না করতে নেতাকর্মীদের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনা জানান নানক। তিনি বলেন, সবাইকে জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে।
সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, পর্যবেক্ষকসহ নির্বাচন আয়োজন ও পরিচালনায় জড়িত সবাইকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে ভোটার, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সব প্রার্থী এবং সংবাদকর্মীদেরও তিনি ধন্যবাদ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিএনপির ডাকা হরতালে রাজধানীতে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ। সকাল থেকে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর নেতৃত্বে নগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে সামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিলের নেতৃত্ব সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও নগর নেতরা সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতারা পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।