কোরবান আলীর ভাগ্যে আর কত বয়স হলে বয়স্ক ভাতা জুটবে!
“মুনসী সাইফুল বারী ডাবলু”
বয়স্ক ভাতার জন্য বার বার চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে গেলেও ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে। এমনি এক শতবর্ষী অভাগা বৃদ্ধ কোরবান আলী বসবাস করেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের রাজবাড়ীমুকুন্দ গ্রামে। বাবা মারা গেছে অনেক আগেই। বয়সের ভারে নুয়েপড়া কোরবান আলী কোনো রকমে হাঁটাচলা করতে পারেন।
কোরবান আলী (আইডি নম্বর ১০১৮৮৭৭১০৯২৯৭) ১৯২৭ সালের ১৫ই এপ্রিল কোরবান আলী মির্জাপুর ইউনিয়নের রাজবাড়ী মুকুন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মৃত শুকুর আলী সেখ। ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ অনুযায়ী কোরবান আলীর বর্তমান বয়স ৯২ বছর ১০ মাস। পৈত্রিক সূত্রে কোন জমি নেই, অন্যের জায়গায় টিনের ছাপড়া তুলে বসবাস করছে। বার্ধক্যে এসে নানা অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে দিন কাটে তার। বার্ধক্যের কারণে কোরবান আলী এখন আর সংসারের কোনো কাজকর্ম করতে পারে না। তার মধ্যে শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা অসুখ বিসুখ। চোখের কোনে পানি ৯৩ বছর বয়সী কোরবান আলীর। অন্যের জমিতে কৃষিকাজ সহ কোন করার মত শক্তি সামর্থ্য তার নেই । তার চোখের পানিও যেন দেখার কেউ নেই। তিনি এখন বয়সের ভারে কানেও কম শোনেন, কথা বলার মতো শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলেছে। তবুও তার ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক ভাতা।
কোরবান আলী জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বিষন্ততায় ভুগছেন। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশে কোরবান আলী চেষ্টা করেও পাচ্ছেন না বয়স্ক ভাতা। তাইতো তার একটাই প্রশ্ন আর কত বয়স হলে আমি বয়স্ক ভাতা পাব? করুণ আকুতি আর জলেভেজা চোখে তিনি আরও বলেন, সমাজের অনেকের কাছে আমি ধরনা দিয়েছি কিন্তু মিলছে শুধু বছরের পর বছর আশ্বাস ‘আগামীতে আসলে পাবেন’। এই আশ্বাসটুকু ছাড়া আর কিছুই পাননি তিনি।
কোরবান জানান, বয়স্ক ভাতা তো সোনার হরিণ। এই তীব্র শীতে সরকারি কোনো কম্বলও আমার ভাগ্যে জোটেনি। আমরা অসহায় ও গরিব মানুষ, আমাদেরকে দেখার জন্য যেন কেউ নেই। আমরা বয়স্ক ভাতার কার্ড পাওয়ার জন্য টাকা দিতে পারি না, তাই আমাদের ভাগ্যে কার্ডও জোটে না।
শেরপুর উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সুত্রে জানাযায়, দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ দুস্থ ও স্বল্প উপার্জনক্ষম অথবা উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধান করতে পরিবার ও সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরে তৎকালীন আওয়ামী লীগের মহাজোট সরকার ‘বয়স্কভাতা’ কর্মসূচি প্রবর্তন করে। প্রাথমিকভাবে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলা সহ ১০ জন দরিদ্র বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে প্রতিমাসে ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের আওতায় আনা হয়। পরবর্তীতে দেশের সকল পৌরসভা ও সিটিকর্পোরেশন এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত করা হয়।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের অঙ্গিকার হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে বয়স্কভাতাভোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে ক্ষমতা গ্রহণোত্তর ২০০৯-১০ অর্থ বছরে বয়স্কভাতাভোগীর সংখ্যা ২০ লক্ষ জন থেকে বৃদ্ধি করে ২২ লক্ষ ৫০ হাজার জনে এবং জনপ্রতি মাসিক ভাতার হার ২৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৩০০ টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৪৪ লক্ষ বয়স্ক ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়। চলতি অর্থ বছরে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২৬৪০ কোটি টাকা। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিবিড় তদারকি এবং সমাজসেবা অধিদফতরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমে বিগত ৪ বছরে বয়স্কভাতা বিতরণে প্রায় শতভাগ সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
বর্তমানে বয়স্কভাতা কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা হলো; ২০০৪ সালে প্রণীত বাস্তবায়ন নীতিমালা সংশোধন করে যুগোপযোগীকরণ, অধিক সংখ্যক মহিলাকে ভাতা কার্যক্রমের আওতায় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে মহিলাদের বয়স ৬৫ বছর থেকে কমিয়ে ৬২ বছর নির্ধারণ, উপকারভোগী নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্তকরণ, ডাটাবেইজ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ এবং ১০ টাকার বিনিময়ে সকল ভাতাভোগীর নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খুলে ভাতার অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে।
শেরপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ওবাইদুর হক বলেন, কোরবান আলী বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য। এত দিন কেনইবা পেলেন না, এটি দুঃখজনক। তবে মির্জাপুর ইউনিয়নের ২০১৯-২০ অর্থ বছরের অতিরিক্ত কোটায় বরাদ্ধপ্রাপ্ত ভাতাভোগি এখন নির্বাচন করা হয়নি। ভাতাভোগি নির্বাচন কালে তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভাতা প্রদান করা হবে।