শেরপুরে চাকুরীর ফাঁদে শিক্ষার্থীরা অভিনব কায়দায় হচ্ছে প্রতারনা!
“মুনসী সাইফুল বারী ডাবলু”
এসএসসি পরীক্ষার্থী নাজনীন আলম (ছদ্মনাম)। বাবা দিন মজুর। টানাপোড়েনের সংসার। একটি স্বনামধন্য পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে ইমেইলে আবেদন পাঠায়। এরপর প্রতারকচক্র মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ৬শ টাকা বিকাশে দিতে বলে। সেটা পাঠালে আবারো ইমেইলে নিয়োগপত্র দেবার জন্য ১৬শ টাকা দিতে বলে। এভাবে কয়েকদফা ৬ হাজার ২শ টাকা নেবার পর মোবাইল ফোনে আজেবাজে কথা বলে। প্রথমে আশার আলো দেখলেও শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে নিজেই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
এভাবে মাসিক মোটা অংকের টাকা বেতনের চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থী বেকারদের সাথে প্রতারণা করে আসছে একটি চক্র। মাসিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতনের চাকুরীর অফার পেয়ে ৮ম শ্রেণি থেকে এইচএসসি পাশ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদে বেশি পা দিচ্ছে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভাটরা গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান একাদশ শ্রেনীর ছাত্র ইমরান হোসেন। কিছুদিন পুর্বে বগুড়া থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিষ্ঠিত দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে ফোরজি নেটওয়ার্কে নিয়োগের। যেখানে শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবে এবং বিশেষ সুযোগ সুবিধা থাকবে। সুপারভাইজার পদে বেতন ১৭ হাজার ৯শ টাকা। পরীক্ষার সময় কাজ করতে হবে না। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে একটি কম্পিউটার দোকান থেকে ইমেইলে আবেদন পাঠায়। পরদিন ফিরতি ইমেইলে তাকে আবেদন ফরম ও নিয়োগপত্র দেয়া হয় এবং মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে দুই দফায় ৬শ টাকা ও ১ হাজার ৬শ৫০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে নেয়া হয়। এরপর আবারো প্রতারক চক্র চাকুরীর জন্য সেমিনারের খরচ বাবদ দুই হাজার টাকা বিকাশে দিতে বলে। এতে সন্দেহ হলে সে ও তার বাবা এলাকার এক বড় ভাইয়ের কাছে গিয়ে ঘটনাটি খুলে বলেন। তখন তিনি সব খোঁজ খবর নিয়ে বুঝতে পারেন সবই প্রতারক চক্রের ফাঁদ। এরপর আর প্রতারক চক্রের ফাঁদে তারা পা দেননি।
ইমরান হোসেন জানান, বাবা দরিদ্র কৃষক। পড়াশোনার পাশাপাশি যদি এলাকায় থেকে মাসে এত টাকা বেতন পাওয়া যেত তাহলে ভালই হতো। কিন্তু এভাবে যে প্রতারনা করা হবে তা আমরা বুঝতে পারিনি।
শুধু নাজনীন কিংবা ইমরান নয় এভাবে শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থী ও বেকারদের নিকট থেকে মাসে আর্কষণীয় বেতনের চাকুরী, ল্যাপটপ ও মোটরসাইকেল দেবার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকচক্র।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতারক চক্রটি প্রথমে স্থানীয় কোন প্রতিষ্ঠিত পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তাতে আকর্ষণীয় বেতনের লোভ দেখিয়ে চাকুরীপ্রার্থীদের ইমেইলে আবেদন পাঠাতে বলে। এরপর আবেদন পাঠালেই শুরু হয় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ। প্রথমে আবেদনের জন্য ৫-৬শ টাকা নেয়া হয়। এরপর নিয়োগ পত্র দেবার কথা বলে ১৫শ থেকে ২হাজার টাকা নেয়া হয়। এরপর চাকুরী শুরুর আগে ওরিয়েণ্টেশন বা সেমিনারের কথা বলে টাকা চাওয়া হয়। কিংবা ল্যাপটপ বা মোটরসাইকেল দেবার প্রলোভন দেখিয়ে আবারো টাকা নেয়া হয়। এভাবে ধাপে ধাপে চাকুরী প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের পর চাকুরী না দিয়েই হঠাৎ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া সেই চক্রটি।
এ ছাড়াও প্রতারক চক্রটি ফোরজি নেটওয়ার্কে চাকুরী দেবার কথা বলে দেশের প্রতিষ্ঠিত মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলোর নাম ও লোগো ব্যবহার করছে যাতে সহজ সরল কোমলমতি চাকুরীপ্রার্থীরা সহজেই প্রতারণার ফাঁদে পা দেয়।
এ ব্যাপারে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: হুমায়ন কবির জানান, এ ধরনের কোন লিখিত অভিযোগ তিনি এখন পাইনি। তবে তিনি মৌখিকভাবে শুনেছেন। যদি কেউ এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পড়েন এবং অভিযোগ করেন তাহলে তদন্তকরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।