শেরপুরে আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
“মুনসী সাইফুল বারী ডাবলু”
বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আলুচাষিরা ক্ষেত পরিচর্যায় শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষিশ্রমিক, জমি তৈরি, সার, বীজ সহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের উচ্চমূল্যের কারণে আলুর উৎপাদন খরচ বেশী হওয়ায় কৃষক ন্যায্যমূল্য নিয়ে শংকিত রয়েছে। বিগত বছরের অভিজ্ঞতায় তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
বিগত বছরগুলোয় দেখা গেছে, আলু চাষ করে কৃষকের পক্ষে উৎপাদন খরচও তুলে আনা কষ্টকর হয়েছে। আবার হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেও লাভের মুখ দেখেননি অনেকে। এ বছর অনুরূপ পরিস্থিতির উদ্ভবের আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। স্বাভাবিক কারণে কৃষকের মধ্যে হতাশা ভর করেছে। আলুর দাম কমে যেতে পারে বলেও সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেক চাষি। উপজেলার পানিশারা, দারুগ্রাম, খুরতা, আমইন, দক্ষিন আমইন,কেল্লা,পোশী,গোন্দইল সহ বেশ কয়েকটি এলাকার মাঠজুড়ে যে দিকে চোখ যায় সেদিকে শুধু দেখা যাবে আলুর ক্ষেত।
জানাযায় স্থানীয় কৃষি অধিদফতরের অনুপ্রেরণায় অনেক কৃষক ধানের জমিতে এবার আলু চাষ করেছেন। তবে ক্ষেত থেকে আলু উত্তোলনের সময় কাংক্ষিত দাম পাবেন কি না তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন এলাকার আলু চাষিরা। আমইন গ্রামের আলু চাষি মকবুল হোসেন জানান, খারাপ আবহাওয়া ও আলুর বাজারদর কম থাকায় গতবছর চাষিদের বিঘা প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এ বছর বেড়েছে বীজ, কীটনাশক ও শ্রমের মুল্য।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবছর আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৫ শত হেক্টর জমি নির্ধারন করা হয়েছে,সেখানে ২ হাজার ৬শত হেক্টও জমিতে এবার আলু চাষ হয়েছে। গত বছর আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২হাজার ৮ শ ৩০ হেক্টর জমি আর অর্জিত হয়েছিল ২হাজার ৮শ ৫০ হেক্টর যা এ বছরের তুলনায় ২৩০ হেক্টর বেশী ছিল। অন্যান্য বছরে আলু ক্ষেতে ভাইরাস দেখা দিলেও এবছর তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি কৃষককে। যে কারণে কৃষককে অনেকটা আশাবাদী মনে হয়েছে। শেরপুর উপজেলার পানিসারা গ্রামের আলু চাষি শফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর আলু ক্ষেতের লক্ষণ দেখে ভালো মনে হচ্ছে। আর কিছুদিন গেলেই এসব জমি থেকে আলু তোলা যাবে। ইতিমধ্যে কিছু কিছু জমির আলু বাজারে তোলা হয়েছে। দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন বাজারে আলুর দাম ভালো থাকলেও সামনে আলু তোলার উপযুক্ত সময়ে দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য ইতিমধ্যে আমরা আলু সংরক্ষণের জন্য উপজেলার কোল্ডস্টোরেজ গুলোতে যোগাযোগ করছি। কিন্তু সেখানে ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই বুকিং দেওয়ায় আমাদের মতো ছোট চাষিরা কোনো সুযোগ পাচ্ছেনা। একই এলাকার কৃষক জাহিদুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, ইলিয়াছ আলী, আব্দুল মালেক বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত বছর তাদের আলু চাষে অল্প লাভ হয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে আলু চাষের জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া হওয়ায় ভালো ফলনের আশা করছেন তারা।ইতিমধ্যে উপজেলার কোল্ড স্টোরেজগুলোতে বড় বড় ব্যবসায়ীরা দখলে নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তারা অতীতের ন্যায় কৃষককে জিম্মি করে পানির দরে আলু কিনে কোল্ড স্টোরেজে মজুদ রাখার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, এক বিঘা জমিতে আলু চাষে যে পরিমাণ খরচ হয় সে তুলনায় বাজারে আলুর দাম পাওয়া যায় না। আলুর দাম যদি মনপ্রতি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা হয় তাহলে আমরা লাভবান হব। কিন্তু আলু তোলার মৌসুম শুরু হলে বাজার দাম কম হওয়ায় সেক্ষেত্রে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। এজন্য আলু চাষকে লাভজনক করে তুলতে আলুর ন্যায্যমূল্য দাবি করেন তিনি। শেরপুর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার ছামিদুল ইসলাম বলেন, শীতের সবজি আলু। শীত বাড়াতে আলুর ফলনও ভাল হয়। উপজেলার মাঠজুড়ে এখন আলুর আবাদ। কার্ডিনাল ও ডাইমন্ড জাতের আলু বেশি চাষ হয়েছে, এছাড়াও এক্সটারিজ, পাকরি, হাগরাই, রোমানা সহ বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে। কৃষক আলুতে লাভের মুখ দেখবেন বলে তিনি আশা করেন।
শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা: সারমিন আক্তার বলেন, এবার আবহাওয়া ভাল ছিল। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়েছি সময়মত জমিতে পরিচর্যা করার। কৃষি বিভাগের একান্ত প্রচেষ্টায় এবছর আলুর ক্ষেতকে রোগ বালাইমুক্ত রাখতে কৃষকরা সক্ষম হয়েছে। উপজেলার কোথাও আলুর ক্ষেতে কোন সমস্যা দেখা যায়নি। আশা করা যাচ্ছে সামনে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে আলুর বাম্পার ফলন হবে।