দেশের খবর

এনামুল-রূপনের বাড়িতে টাকার গুদাম!

Spread the love

শেরপুর ডেস্ক: ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া দুই ভাই এনামুল হক এনু ও রূপন ভূঁইয়ার আরেকটি বাড়ির সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। গত সোমবার মধ্যরাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পুরান ঢাকার লালমোহন সাহা স্ট্রিটের ঐ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি সিন্দুকভর্তি থরে থরে সাজানো সাড়ে ২৬ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ছোট্ট এই বাড়িতে কেউ বসবাস করত না। বাড়িটি যেন টাকার গুদাম! শুধু টাকাই নয়, ৫ কোটি টাকার এফডিআর, এক কেজি সোনা, ইউএস ডলারসহ বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রাও উদ্ধার করা হয়েছে।
র‌্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, এমন আরো ২৪টি বাড়ি ও ৬টি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলোতে পর্যায়ক্রমে অভিযান চালানো হবে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পদে ছিলেন এ দুই ভাই। শুধু তারা দুজনই নন, পরিবারের পাঁচ সদস্যসহ ঘনিষ্ঠ ১৭ জনকে দলের বিভিন্ন পদেও এনেছেন তারা।
পুরান ঢাকার লালমোহন সাহা স্ট্রিটর ১১৯/১ হোল্ডিংয়ে মমতাজ ভিলা নামের ঐ ছয়তলা বাড়ির নিচতলায় সোমবার মধ্যরাত থেকে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলমের নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়। পরে মেশিন এনে টাকা গোনা শেষ করতে গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত লেগে যায়। এরপর ঘটনাস্থলে এক ব্রিফিংয়ে র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রাকিবুল হাসান বলেন, নিচতলার ঐ বাসায় পাঁচটি সিন্দুকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা এবং ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সোনার গয়না পাওয়া গেছে প্রায় এক কেজি। যেসব বিদেশি মুদ্রা পাওয়া গেছে, তার মধ্যে আছে ৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার, ১৫৪ মালয়েশীয় রিংগিত, ৫ হাজার ৩৫০ ভারতীয় রুপি, ১ হাজার ১৯৫ চায়নিজ ইয়েন, ১১ হাজার ৫৬০ থাই বাথ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ১০০ দিরহাম রয়েছে। তিনি বলেন, এই অর্থ এবং অন্যান্য জিনিস থানায় হস্তান্তর করা হবে। সেখান থেকে নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে চলে যাবে।
র‌্যাব-৩-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ বি এম ফয়জুল ইসলাম বলেন, ‘সংকীর্ণ গলির ভেতরে ঐ বাসায় অভিযানের সময় কেউ ছিলেন না। বাসাটি আকারে ছোটো হলেও সবকিছু বেশ সুরক্ষিত অবস্থায় ছিল। এনামুল-রূপনের ২৪টি বাড়ির বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা এ বাড়ির সন্ধান পাই। তবে এখান থেকে নতুন কাউকে আটক করা যায়নি। ঐ বাড়িতে যেসব ক্যাসিনোর সরঞ্জাম পাওয়া গেছে, সেগুলোতে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সিল লাগানো ছিল। এই বাড়িতে অভিযানের মধ্যেই ঐ এলাকায় তাদের আরো একটি বাড়ির সন্ধান পাওয়ার খবর আসে। যদিও নিশ্চিত না হওয়ায় ঐ বাড়িতে পরে আর অভিযান চালানো হয়নি।
বেশ কিছুদিন পলাতক থাকার পর গত ১৩ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যায় একটি বাড়ি থেকে সহযোগীসহ গ্রেফতার হন দুই ভাই। এত টাকার উত্স কী, কেন এখানে এনে রাখা হয়েছিল, সেসব বিষয় তদন্ত করে বের করতে হবে বলে জানান র‌্যাব-৩-এর সিইও। ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের পরিচালক এনামুল ছিলেন গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। আর তার ভাই রূপন ছিলেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে ওয়ান্ডারার্সে অভিযান চালিয়ে জুয়ার সরঞ্জাম, কয়েক লাখ টাকা ও মদ উদ্ধার করে র্যাব। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর গেন্ডারিয়ায় প্রথমে দুই ভাইয়ের বাড়িতে এবং পরে তাদের এক কর্মচারী ও তাদের এক বন্ধুর বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা, আট কেজি সোনা ও ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। র্যাবের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, সিন্দুকে পাওয়া ঐ টাকার উৎস ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো। টাকা রাখতে জায়গা বেশি লাগে বলে কিছু অংশ দিয়ে সোনা কিনে রাখতেন এনামুল। ঐ ঘটনার পর মোট সাতটি মামলা করা হয়, যার মধ্যে অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়া পরিচালনা এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে চারটি মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে সেদিন বলা হয়, সেপ্টেম্বরে র‌্যাবের ঐ অভিযানের পর তারা দুজন কক্সবাজারে চলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে নৌপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু ঐ পথে যেতে না পেরে কেরানীগঞ্জে এসে আশ্রয় নেন এবং ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করান। ঐ পাসপোর্ট দিয়ে ভারত হয়ে নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তখন সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছিলেন, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো কারবারের হোতা ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা এ দুই ভাই। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছেন, প্রথমে ঐ ক্লাবে তারা ‘ওয়ান টেন’ নামে একটি জুয়া খেলা চালু করেন, পরে নেপালিদের মাধ্যমে সরঞ্জাম এনে সেখানে পুরোদমে ক্যাসিনো চালু করেন। দুই ভাইয়ের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৯১টি ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে প্রায় ১৯ কোটি ১১ লাখ টাকার তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে ইমতিয়াজ সেদিন বলেন, এসব ব্যাংক হিসাব এখন অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।সুত্র-ইত্তেফাক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button
Close