বিদেশের খবর

দিল্লিতে নজিরবিহীন সহিংসতা নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৭

Spread the love

শেরপুর ডেস্ক: ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ নামানোর পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় গণমাধ্যমের ভাষ্যÑ সিলামপুর, জাফরাবাদ, মৌজপুরসহ উত্তর-পূর্ব দিল্লির অনেক এলাকায় দুদিন ধরে আগ্নেয়াস্ত্র, তলোয়ার, রামদা, লাঠি, রড হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে উন্মত্ত জনতা। এর মধ্যে হিন্দু-মুসলিম দুই ধর্মের অনুসারীই আছেন। কিছু এলাকায় মসজিদেও হামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে উত্তর-পূর্ব দিল্লির চাঁদবাগ, ব্রহ্মপুরী, মুস্তাফাবাদ, গোকুলপুরীতে সিএএ’র পক্ষ ও বিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৬ জন নিহত ও ৭০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। চাঁদবাগের একটি নর্দমা থেকে অঙ্কিত শর্মা নামে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার লাশ পাওয়া গেছে গতকাল। গত চার দিনের সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা ২৭ জনে দাঁড়িয়েছে; আহত দুই শতাধিক, যাদের মধ্যে অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত মঙ্গলবারও এসব এলাকায় তুমুল সংঘর্ষ হয়;
গাড়ি-দোকানপাট-স্থাপনায় চলে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শহরের অধিকাংশ এলাকায় জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা; বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, থেমে গেছে যানের চাকা, জনশূন্য হয়ে গেছে হাটবাজার। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। তিনি বলেন, ‘দিল্লি পুলিশের যোগ্যতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করছে। এর বিহিত হওয়া দরকার। উর্দিধারীদের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে জনসাধারণের।’
রাজধানীর এমন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে অবশেষে মুখ খুলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। গতকাল এক টুইটে দিল্লিবাসীকে তিনি শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তার টুইট ছিলÑ ‘শান্তি ও সম্প্রীতি আমাদের সংস্কৃতির মূল কথা। দিল্লির ভাইবোনদের কাছে অনুরোধ, সর্বদা শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখুন। যত দ্রুত সম্ভব দিল্লিতে শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফিরে আসা জরুরি। দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছি আমি। পরিস্থিতি যেন দ্রুত স্বাভাবিক হয়, শান্তি ফিরে আসে, সে জন্য পুলিশ ও অন্য সংস্থাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাজ করে চলেছে।’
একই দিন দেশটির হাইকোর্টও দিল্লির সহিংসতা নিয়ে কথা বলেছেন। এনডিটিভি জানায়, পরিস্থিতি শান্ত করতে দিল্লির রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকারকে একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলিধর বলেছেন, ‘শহরে আর একটা ১৯৮৪ ঘটতে দিতে পারি না আমরা। শুনেছি এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার ওপর হামলা হয়েছে। বিষয়টি অবশ্যই দেখা উচিত।’ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শনে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়াকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে যথোপযুক্ত ব্যবস্থাসহ আহতদের হাসপাতালে নিতে দিল্লি পুলিশকে কাজ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৪ সালে দিল্লিতে শিখবিরোধী সহিংসতায় প্রায় ৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
দিল্লির পরিস্থিতিকে গত এক দশকের মধ্যে ভারতে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা উল্লেখ করে বিবিসি বলেছে, সংঘর্ষের ছবি ও ভিডিওতে সয়লাব হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এসবে দেখা গেছে, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি লাঠি-রড নিয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুই পক্ষ। গত চার দিনে শহরের অন্তত দুটি মসজিদে হামলা হয়েছে। শহরের সহিংসতাপ্রবণ এলাকা ঘুরে বিবিসির প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সংঘর্ষ থামাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। জনতা এখানে খুবই উত্তেজিত। তারা সাংবাদিকদেরও হামলা করছে; ক্যামেরা ভেঙে দিচ্ছে, মোবাইল ফোন কেড়ে নিচ্ছে। দিল্লিতে এখন পুরোপুরি দাঙ্গা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এসব সংঘর্ষ যে শুধু সড়কে, তা নয়। লোকজনের বাড়িঘরেও হামলাকারীরা ঢুকে পড়ছে। এদিকে দিল্লি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবি করছেন, পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকার মতো কিছু দেখা যাচ্ছে না।
এর মধ্যে খোদ রাজধানীতে চার দিন ধরে এমন সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে দেশটির পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলেছেন, সংঘর্ষের সময় পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিকে তারা ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সাদৃশ্য খোঁজার চেষ্টা করেছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পুলিশ আগে থেকে আরও সক্রিয় হলে দিল্লি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেত না। আর পরিস্থিতির এমন অবনতির পরও কেন সেনা নামানো হলো নাÑ এমন প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির প্রভাবশালী নেতা নবাব মালিক সরাসরি গুজরাট দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে দিল্লিতে সংঘর্ষ চলছে, পুলিশ সেখানে নীরব দর্শক। রাজধানীতে কেন এটা হবে? দিল্লিতেও ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার মডেল চলছে।’
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দাবি জানিয়েছেন শহরে সেনা মোতায়েনের। মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালসহ দিল্লি পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সে সময়ই কেজরিওয়াল সেনা মোতায়েনের দাবি জানান। এ ব্যাপারে অমিত শাহ কিছু না বললেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
দিল্লিতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় গত রবিবার বিকালে। এরও আগে সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। দিল্লির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলমান সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের তিন দিনের মধ্যে হটাতে পুলিশকে আলটিমেটাম দেন তিনি। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের না হটালে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলে তিনি হুমকি দেন। কার্যত, এর পরই বিক্ষোভকারীদের ওপর উগ্র হিন্দুরা হামলা চালায় এবং উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। (সংগৃহিত)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button
Close