বিশ্ব জুড়ে আকাশপথে বিপর্যয়
শেরপুর ডেস্ক: করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে বাতিল হচ্ছে একের পর এক ফ্লাইট। বিশ্বের অন্যান্য সব খাতের মতোই বিমান পরিবহন খাতও পড়েছে বড়ো ধরনের ক্ষতির আবর্তে। কভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে আকাশপথে।
বিশেষ করে চীন, ইরান, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আক্রান্ত দেশগুলোর সঙ্গে বিমান চলাচল বাতিল ও সীমিত করেছে বহু দেশ। করোনা আতঙ্কে যাত্রীর সংকট আর বিভিন্ন দেশে বিমানযোগাযোগ বন্ধের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছে বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো। বড়ো বড়ো বিমানবন্দর ফাঁকা হয়ে পড়েছে। অনেক এয়ারলাইনস তাদের কর্মীদের বাধ্যতামূলক অবৈতনিক ছুটিতে পাঠিয়েছে। অনেক বিমান সংস্থার পাইলট এবং কর্মীরা ভাইরাসে আক্রান্তের ভয়ে কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দেশে দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় বিশ্ব পর্যটনে ধস নেমেছে।
বিশ্ব জুড়ে গত দুই মাসে ২ লাখেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থা (আইসিএও) জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস বা কভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোকে ৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত লোকসানের মাশুল গুনতে হতে পারে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিমান চলাচল ৩৫ শতাংশ কমে এসেছে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা-আইএটিএ এটিকে গত এক দশকে ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, মূলত করোনা ভাইরাসের কারণে যাত্রীদের ভ্রমণ অনীহা এবং ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিমান চলাচল বন্ধ করেছে বিভিন্ন দেশ। ফ্লাইটগুলোর ধারণক্ষমতার চেয়ে কম যাত্রী হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
এদিকে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে সংকট তৈরি হওয়ায় সারা বিশ্বে চালানো ১৪২টি ফ্লাইটের মধ্যে ৬৬টি আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ বিমান। বিমানের এমডি মোকাব্বির হোসেন গতকাল সোমবার এই সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, কাতার-কুয়েত বাংলাদেশি যাত্রীদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় গন্তব্য দুটিতে সব ফ্লাইট অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলেছে, ইতিমধ্যে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ শতাংশ বিমানযাত্রীর আসা-যাওয়া কমে গেছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, দেশে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত সতর্কতা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। বিদেশফেরত যাত্রীদের বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইনে থাকারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ছয় দেশ থেকে আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে চীন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইরান ও থাইল্যান্ড। এ ছয় দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানারে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে স্ক্যানার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। একই সঙ্গে অবতরণের পর ‘হেলথ ডিক্লারেশন’ ফরম দেওয়া হচ্ছে, এখানে তাদের শারীরিক বিষয়সহ বিভিন্ন তথ্য পূরণ করতে হবে। স্বাস্থ্য তথ্য কার্ডও দেওয়া হচ্ছে। ছয় দেশ থেকে আসা যাত্রীদের শরীরে জ্বর না থাকলেও তাদের বাধ্যতামূলকভাবে নিজ বাড়িতে বা তারা যেখানে থাকবেন, এখানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
উত্তর আমেরিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও ইউরোপের বিমান চলাচলের ট্র্যাককারী এনওয়াইএসই আরকা এয়ারলাইনস ইনডেক্স থেকে জানা যায়, আমেরিকান এয়ারলাইনসের শেয়ার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ পড়ে গেছে। ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ডেলটার শেয়ার ২ দশমিক ৮ শতাংশ কমে গেছে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন জানায়, করোনা ভাইরাসের কারণে রাজস্ব আয়ে ২৯০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। গত এক দশকে প্রথম এ ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ল বিমান চলাচল শিল্প।