খালেদার স্বাস্থ্যের অবস্থা স্থিতিশীল
আজকের শেরপুর ডেস্ক: গুলশানে বাসা ‘ফিরোজা’য় কোয়ারেন্টিনে থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ আছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। তবে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে নিয়মিত দেখা হওয়া এবং লন্ডনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতে পারায় মানসিকভাবে তিনি বেশ স্বস্তিতে আছেন। যদিও তাঁর শারীরিক অবস্থা আগের মতোই স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।
সরকারের নির্বাহী আদেশে দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত হওয়ায় গত ২৫ মার্চ কারামুক্ত হয়ে ফিরোজায় ওঠেন খালেদা জিয়া। ওই দিন থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি কোয়ারেন্টিনে আছেন। কোয়ারেন্টিনের এক মাস পূর্ণ হবে আগামী ২৫ এপিল। কারামুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাঁকে বাসায় বসেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বাসায় খালেদা জিয়ার রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা ছাড়াও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে নিয়মিত। দোতলায় বসে সেগুলো করছেন সার্বক্ষণিক সঙ্গে থাকা সেবিকা সাকিলা বেগম। এ ছাড়া দু-এক দিন পরপরই বাসায় গিয়ে স্বাস্থ্যের খোঁজ নিচ্ছেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা. মামুন। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার পুরো বিষয়টি লন্ডনে বসে তদারকি করছেন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান।
জানা গেছে, জোবাইদা ছাড়াও লন্ডনে অবস্থানরত ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান এবং আরেক ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথি এবং তাঁর দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জায়মা রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়া নিয়মিত টেলিফোনে কথা বলে সময় পার করছেন। পারিবারিক সূত্রমতে, একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে প্রায়ই ছেলে, পুত্রবধূ এবং নাতনিদের সঙ্গে কথা বলেন খালেদা জিয়া।
এসব বিষয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. জাহিদ হোসেন গত সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্যের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। উন্নতি হয়নি আবার অবনতিও হয়নি। তবে আত্মীয়দের সান্নিধ্য পাওয়ায় মানসিকভাবে তিনি অবশ্যই আগের তুলনায় কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘ম্যাডামকে পূর্ণ সুস্থ করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। শুধু তা-ই নয়, আধুনিক চিকিৎসার প্রয়োজন হবে।’ ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন।
ফিরোজায় নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্বে নিয়োজিত দুজন সিএসএফ (চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স) সদস্য জানান, কোয়ারেন্টিনে থাকায় দলের নেতাকর্মীরা কেউ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন না। তবে বোন সেলিমা ইসলাম, ভাই শামীম এস্কান্দার এবং তাঁর স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ও তাঁদের ছেলে অভিক রহমান মাঝেমধ্যেই ফিরোজায় গিয়ে খালেদা জিয়ার খোঁজ নিচ্ছেন।
ফিরোজায় গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমও সার্বক্ষণিক খালেদা জিয়ার সঙ্গে আছেন। ব্যক্তিগত বিষয়াদি তিনিই দেখাশোনা করেন। পায়ে আথ্রাইটিসজনিত ব্যথার কারণে খালেদা জিয়া নিচে নামতে পারেন না। তিনি দোতলায়ই থাকেন। নিয়মিত নামাজ পড়া, খাওয়া-দাওয়া ও বিশ্রাম ছাড়া সময় পেলে দেশি-বিদেশি টিভি চ্যানেলে খবর দেখেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টিভির নিয়মিত খবর দেখেই বিএনপি চেয়ারপারসন ইদানীং চিন্তিত হয়ে পড়ছেন। দেশের অর্থনীতি এবং গরিব মানুষের কী হবে, সবার চাকরি থাকবে কি না—এটি ভেবে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন।’
ওই চিকিৎসক আরো বলেন, ‘স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে গেলে কথা প্রসঙ্গে এই উদ্বেগের কথা ম্যাডাম নিজেই শেয়ার করেছেন।’